বুধবার, জুন ২০, ২০১২

ডলি রানী পাল: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম

 ডলি রানী পাল: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম

অনেক সময় ক্লাসে যে পদ্ধতিতে অঙ্ক বোঝানো হতো তা আমি ঠিকভাবে বুঝতে পারতাম নাহয়তো আমি একভাবে করে অভ্যস্ত আর শিক্ষকের শেখানোর পদ্ধতিটা আলাদাসেটা নিয়ে যখন পরে বন্ধুদের কাছে বুঝতে যেতাম, অনেকেই বিরক্ত হতোবলত, ‘তুমি তো কিছুই বোঝো নাযা বোঝো, তাও ভুলমেয়েদের অত বুঝে কাজ নেই!যেন মেয়ে তাদের ধারনা ছিল আমি অঙ্ক বুঝি নাএখন সেই বন্ধুরাই বলে, ‘তুমি যে স্বীকৃতি পেয়েছো, এটা পাওয়ার যোগ্যতা শুধু তোমারইএকরাশ হাসি হেসে এভাবেই নিজের প্রথম হওয়ার অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন ডলি রানী পালঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষের সম্মান চূড়ান্ত পরীক্ষার ফলাফলে প্রথম হয়েছেন তিনিসিজিপিএ ৩.৮৪
ডলির গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলায় বাবা মধুসূদন পাল পেশায় ব্যবসায়ীমা কল্পনা পাল গৃহিণী
শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ে বন্ধুদের তাচ্ছিল্লই নয়, এ পর্যন্ত নানা বাধা পেরোতে হয়েছে তাঁকেআর সেসব পাহাড় পেরোতে সাহায্য করেছেন মা
ডলির মায়ের শখ ছিল মেয়ে গান শিখবেহয়তো নিজের অসমাপ্ত স্বপ্নের বাস্তবায়ন চেয়েছিলেন ডলির মধ্য দিয়েকিন্তু সেটাও হয়নিপরিবারের বাকি সদস্যরা বলেছেন, মেয়েদের এত সবে কী দরকার? স্বপ্নটা তাই অসমাপ্তই রইল
তারপর মাধ্যমিকে পা রাখলেনএবারও মা-ই স্বপ্ন দেখালেনডলি বিজ্ঞান বিভাগে পড়লেনউচ্চমাধ্যমিকেও বিজ্ঞানআর ডলির ফলাফলের খাতায় যুক্ত হলো আরেকটি সাফল্যপেলেন জিপিএ-৫
ডলির স্বপ্ন ছিল ঢাকায় এসে মেডিকেল বা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বেনতাতেও আপত্তি মেয়ে হয়ে এত দূরে কেন? পাশেই খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, সেখানে পড়ো!
আবারও পাশে এসে দাঁড়ালেন মাস্বপ্নের সিঁড়ি গড়তে মেয়েকে পাঠালেন ঢাকায়
মা চেয়েছিলেন ডাক্তার হইতাই ঢাকায় এসে মেডিকেলে ভর্তির জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলামকিন্তু সুযোগ হয়নিতারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা দিইগণিতে চান্স পেয়ে যাই প্রথমেইজানান ডলি
গণিত বিষয়ে কেন পড়লেন প্রশ্ন করতেই তিনি জানান, ‘এ বিষয়ে পড়ার সুপ্ত বাসনা তৈরি করে দিয়েছিলেন স্কুলশিক্ষক রবিউল ইসলামঅঙ্কটা যে মজার বিষয় তিনিই প্রথম আমাকে বুঝিয়েছিলেন
ফলাফলে মায়ের অনুভূতি কেমন, জিজ্ঞেস করতেই উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন ডলি
তারপর একটুকু থেমে বলেন, যখন আমি ডিন স্যারের কাছ থেকে স্বর্ণপদক পেলাম, তখন সেই অনুষ্ঠানে মা-বাবা দুজনেই এসেছিলেনআমি পুরস্কার নিয়ে কাছে যেতেই মা আমায় জড়িয়ে ধরলেনতারপর বললেন, ‘সন্তান সফল হলে মা কত খুশি হয়, বুঝবি নামা হলে বুঝবি!
প্রথম বর্ষে ফলাফল ছিল মোটামুটিদ্বিতীয় বর্ষ থেকেই আমি পড়াশোনায় আরও বেশি গুরুত্ব দিতে শুরু করিতৃতীয় বর্ষে যখন প্রথম হলাম, মনে হলো আমি পারব প্রতিদিন নিয়ম করে পড়তামক্লাসের লেকচার খুব ভালোভাবে অনুসরণ করতাম শিক্ষকেরা যেটা বোর্ডে লিখতেন না, মুখে বলে যেতেন, সেগুলোও খাতায় টুকে রাখতামযেকোনো সমস্যায় শিক্ষকেরা সাহায্য করতেনসহপাঠীরাও অনেক সহযোগিতা করেছে পড়াশোনার ক্ষেত্রে
ডলি রানী পাল এখন মাস্টার্সে পড়ছেন ফলিত গণিতেতাঁর সামনের স্বপ্নটা আরও বড়
স্বাপ্নিক ডলি জানান, ‘গণিত নিয়ে আরও উচ্চতর গবেষণা করতে চাইএখানে এমন কিছু আছে নিশ্চয়ই যা এখনো কেউ বের করেনিআমি এ রকম নতুন কিছু উদ্ভাবন করতে চাইইচ্ছে আছে, দেশের বাইরে গিয়ে উচ্চতর পড়াশোনা করব
দুই ভাইবোনের মধ্যে ডলি বড়গান আর আবৃত্তি শুনতে ভালোবাসেনআর পড়েন গল্পের বইসে ক্ষেত্রে সায়েন্স ফিকশনবিষয়ক বই-ই প্রথম পছন্দ

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

বুধবার, জুন ২০, ২০১২

ডলি রানী পাল: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম

 ডলি রানী পাল: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম

অনেক সময় ক্লাসে যে পদ্ধতিতে অঙ্ক বোঝানো হতো তা আমি ঠিকভাবে বুঝতে পারতাম নাহয়তো আমি একভাবে করে অভ্যস্ত আর শিক্ষকের শেখানোর পদ্ধতিটা আলাদাসেটা নিয়ে যখন পরে বন্ধুদের কাছে বুঝতে যেতাম, অনেকেই বিরক্ত হতোবলত, ‘তুমি তো কিছুই বোঝো নাযা বোঝো, তাও ভুলমেয়েদের অত বুঝে কাজ নেই!যেন মেয়ে তাদের ধারনা ছিল আমি অঙ্ক বুঝি নাএখন সেই বন্ধুরাই বলে, ‘তুমি যে স্বীকৃতি পেয়েছো, এটা পাওয়ার যোগ্যতা শুধু তোমারইএকরাশ হাসি হেসে এভাবেই নিজের প্রথম হওয়ার অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন ডলি রানী পালঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষের সম্মান চূড়ান্ত পরীক্ষার ফলাফলে প্রথম হয়েছেন তিনিসিজিপিএ ৩.৮৪
ডলির গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলায় বাবা মধুসূদন পাল পেশায় ব্যবসায়ীমা কল্পনা পাল গৃহিণী
শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ে বন্ধুদের তাচ্ছিল্লই নয়, এ পর্যন্ত নানা বাধা পেরোতে হয়েছে তাঁকেআর সেসব পাহাড় পেরোতে সাহায্য করেছেন মা
ডলির মায়ের শখ ছিল মেয়ে গান শিখবেহয়তো নিজের অসমাপ্ত স্বপ্নের বাস্তবায়ন চেয়েছিলেন ডলির মধ্য দিয়েকিন্তু সেটাও হয়নিপরিবারের বাকি সদস্যরা বলেছেন, মেয়েদের এত সবে কী দরকার? স্বপ্নটা তাই অসমাপ্তই রইল
তারপর মাধ্যমিকে পা রাখলেনএবারও মা-ই স্বপ্ন দেখালেনডলি বিজ্ঞান বিভাগে পড়লেনউচ্চমাধ্যমিকেও বিজ্ঞানআর ডলির ফলাফলের খাতায় যুক্ত হলো আরেকটি সাফল্যপেলেন জিপিএ-৫
ডলির স্বপ্ন ছিল ঢাকায় এসে মেডিকেল বা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বেনতাতেও আপত্তি মেয়ে হয়ে এত দূরে কেন? পাশেই খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, সেখানে পড়ো!
আবারও পাশে এসে দাঁড়ালেন মাস্বপ্নের সিঁড়ি গড়তে মেয়েকে পাঠালেন ঢাকায়
মা চেয়েছিলেন ডাক্তার হইতাই ঢাকায় এসে মেডিকেলে ভর্তির জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলামকিন্তু সুযোগ হয়নিতারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা দিইগণিতে চান্স পেয়ে যাই প্রথমেইজানান ডলি
গণিত বিষয়ে কেন পড়লেন প্রশ্ন করতেই তিনি জানান, ‘এ বিষয়ে পড়ার সুপ্ত বাসনা তৈরি করে দিয়েছিলেন স্কুলশিক্ষক রবিউল ইসলামঅঙ্কটা যে মজার বিষয় তিনিই প্রথম আমাকে বুঝিয়েছিলেন
ফলাফলে মায়ের অনুভূতি কেমন, জিজ্ঞেস করতেই উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন ডলি
তারপর একটুকু থেমে বলেন, যখন আমি ডিন স্যারের কাছ থেকে স্বর্ণপদক পেলাম, তখন সেই অনুষ্ঠানে মা-বাবা দুজনেই এসেছিলেনআমি পুরস্কার নিয়ে কাছে যেতেই মা আমায় জড়িয়ে ধরলেনতারপর বললেন, ‘সন্তান সফল হলে মা কত খুশি হয়, বুঝবি নামা হলে বুঝবি!
প্রথম বর্ষে ফলাফল ছিল মোটামুটিদ্বিতীয় বর্ষ থেকেই আমি পড়াশোনায় আরও বেশি গুরুত্ব দিতে শুরু করিতৃতীয় বর্ষে যখন প্রথম হলাম, মনে হলো আমি পারব প্রতিদিন নিয়ম করে পড়তামক্লাসের লেকচার খুব ভালোভাবে অনুসরণ করতাম শিক্ষকেরা যেটা বোর্ডে লিখতেন না, মুখে বলে যেতেন, সেগুলোও খাতায় টুকে রাখতামযেকোনো সমস্যায় শিক্ষকেরা সাহায্য করতেনসহপাঠীরাও অনেক সহযোগিতা করেছে পড়াশোনার ক্ষেত্রে
ডলি রানী পাল এখন মাস্টার্সে পড়ছেন ফলিত গণিতেতাঁর সামনের স্বপ্নটা আরও বড়
স্বাপ্নিক ডলি জানান, ‘গণিত নিয়ে আরও উচ্চতর গবেষণা করতে চাইএখানে এমন কিছু আছে নিশ্চয়ই যা এখনো কেউ বের করেনিআমি এ রকম নতুন কিছু উদ্ভাবন করতে চাইইচ্ছে আছে, দেশের বাইরে গিয়ে উচ্চতর পড়াশোনা করব
দুই ভাইবোনের মধ্যে ডলি বড়গান আর আবৃত্তি শুনতে ভালোবাসেনআর পড়েন গল্পের বইসে ক্ষেত্রে সায়েন্স ফিকশনবিষয়ক বই-ই প্রথম পছন্দ

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন